ই-কমার্স ওয়েবসাইট কেমন হওয়া উচিত ?

ই–কমার্স ব্যবসার প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই আপনার ওয়েবসাইটটি যাতে ক্রেতাদের জন্য ব্যবহার উপযোগী ও নিরাপদ হয় সেদিকে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ ই–কমার্স সাইট তৈরি করতে কেবল সুন্দর ডিজাইন করাই যথেষ্ট নয়; বরং ওয়েবসাইটের সব ধরনের ফিচার ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে তৈরি করা উচিত। এখানে একটি আদর্শ ই–কমার্স সাইট কেমন হওয়া উচিত এবং এতে কি কি ফিচার থাকা উচিত তা বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট কেমন হওয়া উচিত এবং কি কি ফিচার থাকা উচিত?
০১# ইউজার-ফ্রেন্ডলি ডিজাইন
ই–কমার্স ওয়েবসাইটের ডিজাইন সহজ এবং ব্যবহারকারী–বান্ধব হওয়া উচিত। বিশেষ করে ক্রেতারা যখন প্রোডাক্ট খুঁজে পেতে অসুবিধায় পড়েন, তখন তারা দ্রুতই সাইট ত্যাগ করেন। তাই ওয়েবসাইটে নেভিগেশনের জন্য স্পষ্ট এবং সহজে বোঝা যায় এমন মেনু, ক্যাটাগরি এবং সার্চ বার থাকা জরুরি। তাছাড়া, সঠিক প্রোডাক্ট লিস্টিং এবং প্রতিটি পণ্যের জন্য আলাদা পেজ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
০২# মোবাইল-ফ্রেন্ডলি বা রেসপন্সিভ ডিজাইন
আজকের ডিজিটাল যুগে বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্রাউজ করে থাকে। ই–কমার্স সাইটে মোবাইল থেকে ব্রাউজ করার অভিজ্ঞতা যাতে ডেক্সটপের মতোই সহজ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। রেসপন্সিভ ডিজাইন ব্যবহার করলে সব ধরনের ডিভাইসে ওয়েবসাইটের ফিচার গুলো সমানভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এটি কেবল ব্যবহারকারীদের জন্য আরামদায়ক নয়, গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনেও সাইটকে আরও ভাল র্যাংক পেতে সাহায্য করে।
০৩# নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ে
ই–কমার্স ওয়েবসাইটের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম। যেহেতু ক্রেতারা অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা অন্যান্য পেমেন্ট অপশন ব্যবহার করে কেনাকাটা করেন, তাই নিরাপত্তার দিকে সঠিক মনোযোগ দেওয়া উচিত। SSL সার্টিফিকেট এবং বিভিন্ন এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করে ডেটা সুরক্ষিত করতে হবে।
০৪# প্রোডাক্ট সার্চ এবং ফিল্টারিং অপশন
বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্টের ভিড়ে ক্রেতারা যাতে সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য খুঁজে পান সেজন্য সার্চ এবং ফিল্টারিং অপশন থাকা অপরিহার্য। সার্চ বারের মাধ্যমে ক্রেতা দ্রুত প্রোডাক্ট সার্চ করতে পারে এবং ফিল্টার অপশন ব্যবহার করে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রোডাক্ট খুঁজতে পারে। ফিল্টারিং অপশন যেমন প্রাইস, কালার, সাইজ, ব্র্যান্ড ইত্যাদি থাকলে ক্রেতারা পন্য কেনার ব্যাপারে আরও সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
০৫# প্রোডাক্ট রিভিউ এবং রেটিং
প্রোডাক্ট রিভিউ এবং রেটিং একজন ক্রেতাকে পণ্য সম্পর্কে বাস্তব ধারণা দেয়, যা তাদের প্রোডাক্ট কেনার সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্রেতারা রিভিউ পড়ে এবং রেটিং দেখে পণ্যের গুণমান ও ব্যবহারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা পান। রিভিউ সিস্টেম কার্যকর হলে এটি কেবল ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় না বরং ওয়েবসাইটের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি করে।
০৬# শপিং কার্ট এবং উইশলিস্ট ফিচার
শপিং কার্ট ফিচার ক্রেতাদের কেনাকাটার প্রক্রিয়া সহজ করে তোলে। ক্রেতারা প্রোডাক্ট নির্বাচন করে কার্টে যোগ করতে পারে এবং পরবর্তীতে একসাথে চেকআউট করতে পারে। উইশলিস্ট ফিচারটি ক্রেতাদের তাদের পছন্দের প্রোডাক্ট সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে, যা পরবর্তীতে কেনার জন্য উপযোগী হতে পারে। উইশলিস্টে প্রোডাক্ট রাখার সুবিধা থাকলে ক্রেতারা ভবিষ্যতে তাদের প্রয়োজনমত সেগুলি কিনতে পারেন, যা সেল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
০৭# অর্ডার ট্র্যাকিং সিস্টেম
অর্ডার প্লেস করার পর গ্রাহকরা তাদের অর্ডার কোথায় আছে এবং কখন পৌঁছাবে তা জানতে চান। একটি কার্যকর অর্ডার ট্র্যাকিং সিস্টেম থাকলে গ্রাহকরা অর্ডারের অবস্থান ও সম্ভাব্য ডেলিভারি তারিখ জানতে পারেন। এতে গ্রাহকরা তাদের অর্ডার নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, যা কাস্টমার স্যাটিসফ্যাকশন বাড়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা তৈরি করে।
০৮# ফাস্ট লোডিং স্পিড
ই–কমার্স ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড যদি দ্রুত না হয় তাহলে ব্যবহারকারীরা সাইট ত্যাগ করে অন্য কোথাও চলে যেতে পারেন। সাইটের দ্রুত লোডিং স্পিড হলে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ভালো হয় এবং কনভার্সন রেট বাড়ে। ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড বাড়াতে CDN, কমপ্রেসড ইমেজ এবং অন্যান্য টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে, যা বাউন্স রেট কমাতেও সহায়ক।
০৯# SEO ফ্রেন্ডলি স্ট্রাকচার
ই–কমার্স সাইটে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) ফ্রেন্ডলি স্ট্রাকচার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। SEO ফ্রেন্ডলি সাইট হলে সার্চ ইঞ্জিনে সাইটের র্যাংকিং বাড়ে, যা আরও বেশি ভিজিটর বাড়াতে সহায়ক। প্রতিটি প্রোডাক্ট পেজের জন্য মেটা ট্যাগ, SEO কিওয়ার্ড এবং রিচ স্নিপেট ব্যবহার করা উচিত। তাছাড়া, ব্লগ পোস্ট বা কন্টেন্ট যোগ করলে সাইটের অর্গানিক ভিজিট বাড়ে।
১০# সহজ চেকআউট প্রক্রিয়া
চেকআউট প্রক্রিয়া যদি জটিল হয় তবে ক্রেতারা তাদের কেনাকাটা সম্পন্ন না করেই সাইট ত্যাগ করতে পারেন। তাই চেকআউট প্রক্রিয়াকে সহজ, সরল এবং দ্রুত করে তোলা উচিত। মাল্টি–স্টেপ ফর্মের বদলে সিঙ্গেল পেজ চেকআউট সিস্টেম ব্যবহার করা যায় যাতে ক্রেতারা একবারে সব তথ্য দিতে পারেন।
১১# নিরাপত্তা এবং প্রাইভেসি
ই–কমার্স সাইটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে গ্রাহকের ব্যক্তিগত এবং আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। SSL সার্টিফিকেট এবং ফায়ারওয়াল ব্যবহার করে সাইটের ডেটা এনক্রিপশন নিশ্চিত করা উচিত। এছাড়া গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য প্রাইভেসি পলিসি থাকতে হবে। সাইবার অ্যাটাক থেকে বাঁচতে নিয়মিত সিকিউরিটি চেক এবং আপডেট করা জরুরি।
ই-কমার্স সাইটের প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় টিকে থাকতে চাইলে ওয়েবসাইটকে ক্রেতার প্রয়োজন মাফিক ফিচার দিয়ে সাজানো প্রয়োজন। SEO ফ্রেন্ডলি স্ট্রাকচার থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট সার্চ, ফিল্টারিং অপশন এবং সহজ চেকআউট প্রক্রিয়া – এসব ফিচার ক্রেতাদের কেনাকাটা প্রক্রিয়াকে সহজ ও আনন্দময় করে। ক্রেতার আস্থা এবং সন্তুষ্টি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক।


